প্রসূতি সেবায় অনন্য পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
এর আগে ৫০শয্যার সরকারি এ হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র স্বাভাবিক প্রসব সেবা চালু থাকলেও, নতুন করে অপারেশন থিয়েটার চালু হওয়ায় প্রসূতি সেবায় ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। বিনামূল্যে প্রসূতি সেবার কারণে এটি গরিবের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, পাকুন্দিয়া উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ লোকের বসবাস। এ বিপুল জনসংখ্যার সরকারি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জনবল সংকট আর যন্ত্রপাতির অভাবে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ ছিল এর অপারেশন থিয়েটার। স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম চললেও অধিকাংশ রোগিকে (সিজার প্রযোজ্য) জেলা সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক থেকে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়েছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অনেক দরিদ্র পরিবারকে ধারদেনা করতে হয়েছে।
বছর খানেক আগে এখানে অপারেশন থিয়েটার চালু হওয়ায় দরিদ্র পরিবারগুলো বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর সুযোগ পেয়েছেন। ফলে একদিকে যেমন বাড়তি টাকা লাগছে না, তেমনি জেলা সদরে যাওয়া-আসার ভোগান্তি থেকেও রেহাই মিলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রসূতি সেবায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি গরিবের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। প্রতি মাসে এই কমপ্লেক্স থেকে গড়ে ১২০-১৩০টি স্বাভাবিক প্রসব সেবা হচ্ছে। তাছাড়া সিজার হচ্ছে প্রতি মাসে ১২-১৪টি। স্বাভাবিক প্রসব সেবা ২৪ঘন্টা চালু রয়েছে। সিজার হয়ে থাকে সপ্তাহে ৩দিন। প্রায় বিনামূল্যেই এখানে প্রসব সেবা পাচ্ছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। তবে সিজারের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ হাসপাতালে না থাকায় বাইরে থেকে কিনতে হয়।
কমপ্লেক্স সূত্রে আরো জানা যায়, করোনা মহামারিতেও এই হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব সেবা চালু ছিল। এছাড়াও সর্বশেষ কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারফিউ পরিস্থিতিতেও এখানে সিজার এবং স্বাভাবিক প্রসব সেবা চালু ছিল। কারফিউ চলাকালীনও সিজার ও স্বাভাবিক প্রসব সেবা দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নূর-এ-আলম খানের নির্দেশনায় জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা.শাহ মো.হাসানুর রহমান ও মেডিকেল অফিসার (অ্যানেসথেসিয়া) ডা.ফারজানা জামান পুনম এবং নার্সদের আন্তরিকতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন দলটি একের পর এক সফল সিজার সম্পন্ন করছেন। ফলে সাধারণ মানুষের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এছাড়াও সর্বাধিক নিরাপদ প্রতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা প্রদানের মাধ্যমে গত বছর জেলায় শ্রেষ্ঠ হয় এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
প্রসূতি সেবা (সিজার) নেওয়া ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির কাছেই সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে সিজার করাতে পেরে তারা খুশি। এতে তাদের কোনো টাকা-পয়সা খরচ হয়নি। জেলা সদরে গেলে টাকা খরচের পাশাপাশি যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হতো।
উপজেলার বুরুদিয়া গ্রামের রুহুল আমিন নামে একজন বলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর থেকে নিয়মিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন এখান থেকেই সিজার করিয়েছি। এতে আমার নামমাত্র টাকা খরচ হয়েছে। উপজেলা সদরে কোনো ক্লিনিকে সিজার হয়না। সিজার করাতে যেতে হতো জেলা সদরে। সেক্ষেত্রে আমার অর্থ ও সময় দুটোই অপচয় হতো। এখান থেকে প্রায় বিনামূল্যে সিজার করাতে পেরে আমি খুশি। বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নূর-এ আলম খান বলেন, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানে এখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক-সেবিকাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিকতা সঙ্গে কাজ করছে। এর মধ্যে ভিন্নতা পেয়েছে প্রসূতি সেবা। প্রতি মাসে এই কমপ্লেক্স থেকে ১২০-১৩০জন দরিদ্র মা স্বাভাবিক প্রসব গ্রহণ করছেন। অপারেশন থিয়েটার চালু হওয়ার পর থেকেই বাড়ছে সিজারিয়ান অপারেশন। গড়ে প্রতি মাসে ১২-১৪টি সিজার হচ্ছে। ফলে প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সিজার করাতে হচ্ছে না। দরিদ্র পরিবারগুলো বিনামূল্যে এখান থেকে সিজার সেবা পাচ্ছেন। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে।
ডেইলি-বাংলাদেশ/এমকে
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS