অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশের অনুমোদনহীন সব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অনেক সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি তিনিও জানেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, "আমি বলেছি দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল এগুলো চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি একদিনে পারব না। কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য।"
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, তিনি সারাজীবন যেভাবে কাজ করে গেছেন এখনও সেভাবে কাজ করতে চান।
তিনি বলেন, "মানুষের কষ্টটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এতে কোনো সন্দেহ নাই, রোগীরা মাটিতে শুয়ে থাকে, চিকিৎসা পায় না। আমি চেষ্টা করব বিষয়গুলো ধরে আগাতে। এতে সময় লাগবে, একদিনে হবে না। সবাই আমাকে সহযোগিতা করলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।"
এ সময় ঢাকার সাঁতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করতে এসে জ্ঞান হারানোর পর নিহত আয়ানের পরিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তারা আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন পাঁচ বছর বয়সী আয়ানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, "কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে আইন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাইনি। রিপোর্ট হাতে পেলে আরও বলা যাবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, "আয়নের মৃত্যুতে আমরা খুবই শোকাহত ও মর্মাহত। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ইতিমধ্যে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা কোন ভাবেই কাম্য নয় এবং পেশাগত অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না।"
মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, দেশের মানুষকে আগামী দুই বছরে করোনাভাইরাসের আরও আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হবে। চতুর্থ ডোজ হিসেবে দেয়া এই ভ্যাকসিন অর্ধেক দেয়া হবে চলতি বছর। বাকী সোয়া কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে আগামী বছর। ফ্রন্টলাইনার, বয়স্ক এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন এমন ব্যক্তিরা পাবেন এই ভ্যাকসিন।
তিনি জানিয়েছেন, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (গ্যাভি) কাছে ভ্যাকসিনের চাহিদা দেয়া হয়েছে। তারা ভ্যাকসিন সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এই ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।
এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, "আড়াই কোটি লোককে আমরা টার্গেট করেছি। ফ্রন্টলাইনার, শিশু, অসুস্থ ও বয়স্ক লোক এই টিকা পাবেন। আমাদের হাতে কিছু টিকা আছে। এছাড়া গ্যাভির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে এ বছর আমাদের এক কোটি টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা আমরা এই বছরই টার্গেটেড পিপলকে দিয়ে দেব। বাকী টিকা দেওয়া হবে আগামী বছর।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, "স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে এখনও করোনাভাইরাসের কিছু টিকা আছে। ফাইজারের এই টিকা নতুন করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর। কাজেই ফ্রন্টলাইনার, সাংবাদিক, চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি যাদেরকে প্রতিনিয়ত জনসমাগমে যেতে হয় তারা চাইলেই ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ নিতে পারেন। এই টিকার মেয়াদ আগামী বছর পর্যন্ত আছে।"
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাজেটের অর্থ ব্যয় করতে পারেনা, এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমাদের স্বাস্থ্য খাত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা আছে যেমন প্রশাসনিক, ক্লিনিক্যাল ও অ্যাকাডেমিক পদে। যারা প্রশাসনিক পদে আসবে বিশেষ করে উপজেলা হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার, সিভিল সার্জন, ডিভিশন ডিরেক্টর তাদের আমরা তৈরি করছি। প্রশাসনিক পদে যারা আসবেন তাদের এলজিডির এক্সপার্টরা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত নিয়মের বিষয়ে হাতে কলমে ট্রেনিং দিচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের পক্ষ থেকে। আমরা চাই যারা ক্লিনিক্যাল ও অ্যাকাডেমিক পদে থাকবে না তাদের প্রশাসনের দিকে আনতে, তাদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত নিয়ম ও কেনাকাটা সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন করে ফিল্ডে দিচ্ছি। আমরা আশা করছি দ্রুত এ সংকট কেটে যাবে।"
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, "কোভিড এখনও চলে যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশেও কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। এজন্য যারা বয়স্ক, যাদের অন্যান্য রোগ আছে তারা দয়া করে জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন। এছাড়া মাস্ক পরে চলাফেরা করবেন।"
মন্ত্রী হয়ে কোন চ্যালেঞ্জ ফিল করছেন কিনা জানতে চাইলে ডা সামন্ত লাল সেন বলেন, "সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমার প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। তা যেন পূরণ করতে পারি।"
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS